শেষ ভালোবাসা

আজ সেই বিশেষ দিন। তোমার সাথে আবারও আমার দেখা হবে। সবকিছু শুরু হয়েছিল যখন তুমি ছিলে মোবাইলের ভিব ভিব করে জ্বলে থাকা সবুজ বাতি। শুধুমাত্র একটি আওয়াজ।ডিজুইএসের দু টাকায় সারারাত কথায় হাজারো অদেখা প্রেমের জন্ম দিয়েছে।তারমাঝে আমরাও ছিলাম। অবশ্য আমাদের প্রেমটা অদেখা থাকেনি। কলেজ ফাকি দিয়ে 108 কিমি: পথ পাড়ি দিয়ে আড়াই ঘন্টা পর যখন কুমিল্লা পৌছালাম। তখন তুমি বিশ্বাস করতে পারছিলে না। ঢাকা থেকে তোমার সাথে দেখা করতে একটা ছেলে চলে এলো। এরপর আরো তিন ঘণ্টা পর তুমি এসেছিলে মাত্র পাচ মিনিটের জন্য। কিন্তু এই পাচ মিনিটই যথেষ্ট ছিলো। আমার বাকিটা জিবন তোমার সাথে যুক্ত করতে। আমরা বড়ো হলাম ,সাথে সাথে আমাদের প্রেমটাও বড়ো হলো। তুমি ভার্সিটিতে ভর্তি হলে। আমরা কাটানো শুরু করলাম। আমাদের জীবনের সবচেয়ে স্বরনীয় অধ্যায়। তখন বলতে গেলে প্রতিদিন দেখা হতো। আর এখন চাইলেও দেখা করা যায় না। আমরা রিকশায় প্রচুর ঘুরেছি। রিকশার চাকা ঘুরতো আর তুমি চোখ বন্ধ করে আমার কাদে মাথা রাখতে। তখন আমার নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হতো। কতই না ভালোবাসতে আমাকে। আচ্ছা তুমি এখন যার সাথে আছো তাকেও তুমি একই রকম ভালোবাসো। ভালোবাসতাম আমিও তোমাকে। মনে আছে একবার প্রচন্ড গরমে তুমি হিট স্টোক করলা। তোমাকে অজ্ঞান দেখে আমার যে কি অবস্থা হয়েছিল। তোমার জ্ঞান অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে ফিরে আসলেও আমাকে স্বাভাবিক করতে কিন্তু তোমাকে অনেক ভোগতে হয়েছিল। উত্তরা থানার সামনে তুমি আমায় প্রথম কিস করেছিলে। তোমরা সাহস ও ছিলো বটে। ভীতুতো ছিলাম আমি তাই সময় থাকতে তোমাকে অর্জন করতে পারিনি। অন্যদের মতো আমাদের মধ্যেও ঝগড়া হতো। শেষের দিকে ঝগড়া একটু বেড়েই গিয়েছিল। তুমি বিয়ের কথা বলতে আর আমি কেরিয়ারের. কথা ভাবতাম। আরো স্টাবলিশ হওয়ার কথা ভাবতাম।বলতাম বিয়ের জন্য তো বাকিটা জীবন পরেই আছে। তোমার পরিবারের চাপের কথা কিছুই ভাবতাম না। অনেক স্বার্থপর হয়ে গিয়েছিলাম।অনেক বেশি, শেষ যেদিন তোমার সাথে আমার কথা হলো। তুমি আমার জেকেট টা বুকে জড়িয়ে প্রচুর কেদে ছিলে। আমিনা কিছুই করতে পারছিলাম না। এরপর পাচটি বছর কেটে গেলো। আজ তোমার সাথে আবারো দেখা হবে। অবাক হই এই ভেবে যে,তোমার জামাই কিভাবে এখনো তোমার ex বয়ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে দেয়। আমি হলে কিন্তু জীবনে ও দিতাম না,হাহাহা।ঐ যে তুমি চলে এসেছো। হাতে বরাবরের মতো গোলাপ ফুল। ফুল গুলো আস্তে করে তুমি আমার কবরের ওপর রাখলে। তোমার কান্না শুরু হয়েছে। আমি জানি তোমার কান্না আরো বাড়বে, বাড়তেই থাকবে। সেদিন এক্সিডেন্টের পর যখন আমি হাসপাতালে নিজের শেষ নিশ্বাস গুনছিলাম।তুমি আমার জেকেট টা জড়িয়ে এভাবেই পাগলের মতো কদছিলে।আমি খুব ছোট বেলায় টলস্টয়ের একটা ওক্তি পড়েছিলাম। যেখানে ওনি বলেছিলেন অতীত বা ভবিষ্যৎ বলতে কিছুই নেই। বর্তমানটাই সব আমাদের কিছু বলার থাকলে এখনই বলতে হবে। কিছু করার থাকলে এখনই করতে হবে। ভালোবাসতে হলে এখনই বাসতে হবে। ভবিষ্যৎ একটা মরিচিকা।এখন আমার খুব মনে হয়। তখন তুমি আমার সামনে ছিলে।তখন কেন আর একটু ভালো করে তোমায় দেখলাম না। স্পর্শ করলাম না, অনুভব করলাম না। টলস্টয়ের ওক্তি টা আমি শুধু পড়েছিলাম ধারণ করতে পারি নাই। আসলে আমরা কেউই পারি না।।।