0

খারাপ একটা সময় প্রায় সবার জীবনেই আসে। কখনো ভাগ্যদোষে, কখনো নিজের দোষে। বলতে গেলে, জীবনের কোন না কোন স্তরে এমন একটা সময় মানুষ অতিক্রম করেই থাকে। এই দুঃসময়ে কেউ ভেঙে পড়ে, কেউবা মনোবল শক্ত রেখে এটা থেকে কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করে। তবে খারাপ সময় অতিবাহিত করা বেশিরভাগ মানুষের মধ্যেই একটা সুপ্ত চাওয়া কাজ করে। মনে মনে ভাবে, প্রত্যাশায় থাকে; তার অতি আপন মানুষগুলো তার সংস্পর্শে থাকুক। তাকে সঙ্গ দিক, পরামর্শ দিক, সান্ত্বনা দিক। বুকের মধ্যে তাকে আগলে রাখুক, একেবারে তার আষ্টেপৃষ্ঠে লেগে থাকুক।
.
দুঃসময়ের কবলে পড়লে কেউ-ই আসলে ওভাবে কাউকে কাছে পায় না। অতি আপন মানুষগুলো পাশে এসে দাঁড়ায় না। নিজের একআধটু সময় ব্যয় করে আপন ভাবতে থাকা মানুষগুলো সঙ্গ
দেয় না। বরং এই মানুষগুলো ক্ষেত্রবিশেষে উল্টো বদনাম করে, তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে, অবহেলা করে। এক পা, দুই পা করে ধীরে ধীরে দূরে সরে যায়। তাদের ছায়াও খুঁজে পাওয়া যায় না। অথচ পাশে না আসা মানুষটি, দূরে সরে যাওয়া মানুষটির পাশে দিনের পর দিন কতই না থাকা হয়েছে। কতই না তাকে সঙ্গ দেয়া হয়েছে। অতি আপন মানুষ মনে করে তাকে কতই না আগলে রাখা হয়েছে। তার সামান্য কষ্টও সহ্য হত না। তার চোখে জল আসার আগেই নিজের চোখে জল এসে পড়ত। তার কোন একটা দুঃসংবাদ শোনামাত্রই বুকটা ভয়াবহরকম কেঁপে ওঠত।
.
জীবনে খারাপ সময় এসেছে বা আসবে। আলো-আঁধারের মাঝেই জীবনের পথচলা। এই পথচলায় প্রত্যেকটি মানুষই স্বতন্ত্র। এখানে কেউ-ই কারো নয়, কেউ-ই কারো সঙ্গি হয় না, কেউ-ই কারো পাশে এসে দাঁড়ায় না—এটাই অপ্রিয় সত্য। যদিও এমনটি হওয়া উচিত নয়, এমনটি হওয়ার কথা নয়। একজনের দুঃসময়ে অন্যজন পাশে এসে দাঁড়াবে, অনুপ্রেরণা দেবে, সাহস দেবে এটাই মানুষের বৈশিষ্ট্য হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই বৈশিষ্ট্যের আলোকে মানুষ চলে না। স্বার্থপর মানুষগুলো এসবের ধার ধারে না। তাই নিজেই নিজের পথপ্রদর্শক হতে হয়। নিজে নিজেই ঘুরে দাঁড়াতে হয়। অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়লে মানসিক দৈন্যতা দেখা দেয়, সামনের পথচলা থমকে যায়। সুন্দর একটা ভবিষ্যত অন্ধকারে তলিয়ে যায়।
.
বাসা-বাড়িতে আগুনের কবলে পড়লেও তুমি বরং অনেকের সহযোগিতা পাবে, অনুকম্পা পাবে। তোমাকে উদ্ধারের জন্যও অনেকগুলো ব্যবস্থা থাকবে। প্রতিবেশীরা ছুটে আসবে, পথচারী
মানুষগুলো আসবে, ফায়ারসার্ভিসের কর্মীরা আসবে। সবার প্রাণান্ত চেষ্টা থাকবে তোমাকে উদ্ধার করার জন্য, প্রাণে বাঁচানোর জন্য। তোমার জন্য আগুনজ্বলা ভবনের নির্ধারিত সিঁড়ি থাকবে, বিকল্প সিঁড়ি থাকবে, ফায়ারসার্ভিস কর্মীদের সৃষ্ট সিঁড়ি থাকবে। কিন্তু ব্যক্তিগত-পারিবারিক জীবনের কষ্ট, মানসিক কষ্ট, কাউকে হারানোর কষ্টে তুমি পুড়ে পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেলেও কেউ ছুটে আসবে না। কেউ-ই না। তোমার সেই খারাপ সময়ে, তোমার সেই দুঃসময়ে তুমিই তোমার ত্রাণকর্তা। তোমাকেই তোমার উদ্ধার করতে হবে। কোন তথাকথিত আপন মানুষের জন্য অপেক্ষায় থাকা যাবে না, কারো ওপর নির্ভর করা যাবে না। একদমই না।

Post a Comment

 
Top